৫ হাজার কোটি টাকার অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান প্রকল্প

একদিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স : কার্যকারিতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিআরটিএ’র সক্ষমতা নিয়ে ধোঁয়াশা

Passenger Voice    |    ১২:১৭ পিএম, ২০২২-১১-১৯


একদিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স : কার্যকারিতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিআরটিএ’র সক্ষমতা নিয়ে ধোঁয়াশা

আবু মুছা জীবন ।। বিশ্ব ব্যাংক প্রস্তাবিত “রোড সেফটি প্রোগ্রামের” পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঘরে বসেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবে লাইসেন্স প্রার্থীরা। গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ঘরে বসেই আবেদন কার্যক্রম। আবেদনকারীকে বায়োমেট্রিক্সসহ পরীক্ষার জন্য একবার বিআরটিএতে আসতে হবে। তবে বিআরটিএ’র এ কার্যক্রম কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াশাও। বিআরটিএ’র মতে এ সেবার আওতায় লাইসেন্স প্রার্থীদের একবারের বেশী শ্বশরীরে বিআরটিএতে আসতে হবেনা। এতে করে দালালদের দৌরাত্ম কমবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে পরিবহন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনলাইন সিস্টেমেও দালালরা বেশ সক্রিয়ভাবে নাগরিকদের বিপদে ফেলতে প্রস্তুত থাকে। অনলাইন সিস্টেম এর কার্যকারিতা, চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো কেমন কিংবা সেটা নাগরিক সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা সে বিষয়ে নজর দিতে হবে বিআরটিএ’কে।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং সড়ক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য । প্রকল্পটিতে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর স্টেক হোল্ডার হিসেবে রয়েছে। প্রকল্পটি গত বুধবার থেকে বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে। চলবে ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। 

গত বুধবার বিআরটিএ’র সদর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনআরএসসি) ২৯তম সভা শেষে প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক প্রস্তাবিত রোড সেফটি প্রোগ্রামের আওতাধীন প্রথম পর্যায়ের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এরইমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে, যা দ্রুতই একনেক সভার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে ঢাকার চারটি সার্কেলে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রথমে ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ এ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাকী তিনটিসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় এবং জেলা অফিস গুলোতে চালু করা হবে। তিনি বলেন, এ সেবা চালু হলে লাইসেন্স প্রার্থীদের আর বিআরটিএ অফিসে এসে লাইনে দাঁড়াতে হবেনা।

তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ’র নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও লাইসেন্স প্রাপ্তিতে ভোগান্তি কমাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সবগুলো অফিসে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পর পুরোদমে চালু হবে এই সেবা কার্যক্রম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ’র এক উপ-পরিচালক প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে জানান, বিআরটিএ’র নতুন এ সেবা চালু করতে ইতোমধ্যে ঢাকার তিনটি সার্কেলে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকার তিনটি সার্কেলের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেট্রো সার্কেল -১ এর জন্য ১৫ জন, ঢাকা মেট্রো সার্কেল-২ এর জন্য ১০ জন এবং ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ এর জন্য ৮ জন এনরোলমেন্ট এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দিয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১  এ সেবার কার্যক্রম গত বুধবার ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সার্কেলে যে সকল শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স বিএসপি সফটওয়ার থেকে ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো নির্ধারিত পরীক্ষার তারিখে ছবি ও ফিঙ্গার দিয়েপরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। পরীক্ষায় পাশ করলে পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে ঘরে বসেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবে। এ ছাড়া যারা পরীক্ষায় ফেল করবে তাদেরকে আর ফিঙ্গার দিতে হবেনা।

তবে পরিবহন সেক্টরের একাধিক শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা  প্রকল্পটি নিয়ে  এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান। 

সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. হানিফ খোকন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, অনলাইনে একদিনে ঘরে বসেই লাইসেন্স প্রাপ্তি প্রক্রিয়াটি পেশাদার চালকদের জন্য লাইসেমন্স প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, পেশাদার ড্রাইভারদের বেশীরভাগই স্ব-শিক্ষিত। তাদের বেশীর ভাগই ইমেইল আইডি ব্যবহার করেন না বা করতে অভ্যস্ত না। তাছাড়া পেশাদার ড্রাইভাররা শহরে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। তারা প্রায়ই সময় নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করে। তাদের দেয়া ঠিকানায় পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে লাইসেন্স পাঠালে সেগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তিনি আরো বলেন, অনলাইনে আবেদন করার পর পেশাদার চালকরা অনলাইন ব্যবহারে অদক্ষ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলে বা ইমেইলে আগত এসএমএসগুলো মুছে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন বিআরটিএ এ প্রকল্পটি নিয়ে তাদের সক্ষমতা ও এর সুবিধা অসুবিধাগুলো নিয়ে আরো ব্যাপক চিন্তা করা প্রয়োজন। পূর্বের পদ্ধতিতেই লার্নার লাইসেন্স এর আবেদন প্রক্রিয়া চালু রাখা উচিৎ ।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয় (চুয়েট) এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কলাম লেখক মো. শাহ জালাল মিশুক প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিআরটিএ সম্প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর প্রক্রিয়া সহজীকরণ বিষয়ক অনলাইন বেইজড কম্বাইন্ড ফরমের ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি নিঃসন্দেহে গ্রাহকদের জন্য বেশ সুখকর ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে, অনলাইন সিস্টেম এর কার্যকারিতা, চ্যালেঞ্জ ও লিমিটেশনগুলো কেমন কিংবা সেটা নাগরিক সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা? কারণ পূর্ববর্তী সময়ে দেখা গিয়েছে, নতুন কোনো অনলাইন কার্যক্রম চালু হলে তার লিমিটেশন কিংবা চ্যালেঞ্জগুলো পূর্বে সঠিকভাবে পরীক্ষা ও যাচাই নাহ করে চালু করায় নাগরিকদের সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পাশাপাশি বিআরটিএ অফিসে দালাল কিংবা অবৈধ শ্রেণীর মানুষদের দৌড়াত্ম যেনো বন্ধ করা যায় কারণ এমন অনলাইন সিস্টেমে দালালরাও বেশ সক্রিয়ভাবে নাগরিকদের বিপদে ফেলতে সদা প্রস্তুত থাকে। তাই এই বিষয়েও যেনো বিআরটিএ কতৃপক্ষ সর্বোচ্চ চিন্তা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পিভি/জেএম/ডেস্ক